আমাদের প্রিয় কবি সাম্যের কবি, বিদ্রোহী কবি সর্বোপরি বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আজকে আমরা কাজী নজরুল ইসলাম এর রেখে যাওয়া কিছু উক্তি, স্ট্যাটাস ও বাণী জানব। কাজী নজরুল ইসলাম ১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ,২৪ মে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহাকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ছিল কাজী ফকির আহমেদ এবং মায়ের নাম জাহেদা খাতুন। কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন তার বাবা-মার ষষ্ঠ সন্তান তার ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। ১৯০৯ সালে ১০ বছর বয়সে গ্রামের মক্তব থেকে নিম্ন প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১২ বছর বয়সে লেটো দলে যোগ দেন।
১৯২৯ সালের ১২ই জুলাই স্যান্দন পত্রিকা হিসেবে নবযুগ প্রকাশিত হয়। এবং এর দুই বছর পর ১৯২২ সালের ১২ই আগস্ট তিনি ধুমকেতু নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। ধূমকেতু পত্রিকাটি সপ্তাহে ২ বার প্রকাশিত হতো। এই ধূমকেতু পত্রিকাটিকে আশীর্বাদ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আনন্দময়ীর আগমন এবং বিদ্রোহীদের কৈফিয়ৎ ১৯২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ধূমকেতুর শারদীয় সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। যেহেতু এগুলো ছিল রাজনৈতিক রচনা তাই পত্রিকার এই সংখ্যাটি নিষিদ্ধ হয়। এবং এজন্য নজরুলকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ৭ই জানুয়ারি ১৯২৩ সালে জেলে বসেই লিখে ফেলেন জবানবন্দি মূলক রচনা রাজবন্দীর জবানবন্দী।
কাজী নজরুল ইসলাম এর ভালোবাসার উক্তি
কাজী নজরুল ইসলাম ভালোবাসা নিয়ে অনেক কথাই বলে গিয়েছেন। কারণ তিনি ছিলেন ভালোবাসার বিদ্রোহী কবি। তার কাছে ভালবাসার কোন অর্থ এবং পরিমাণ নেই তার জীবনে। তিনি সবসময় বলে গিয়েছেন ভালোবাসা একজনের জন্য অপেক্ষা করে কোনদিন তুমি সামনে এগিয়ে যেতে পারবে না। জীবনে তুমি যদি তোমার জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাও তাহলে তুমি ভালোবাসার আশা ছেড়ে দাও। কারণ তুমি যাকে ভালবাসবে সে তোমাকে একদিন ভুলে যাবে। তাই তাকে সময় দেওয়ার থেকে তুমি তোমার জীবনে সফল হওয়ার জন্য কোন কাজে সময় দাও জীবনে এগিয়ে যেতে পারবে। আজকে সেই সম্পর্কে কাজী নজরুল ইসলামের ভালোবাসার কিছু উক্তি।
- প্রেম হল ধীর প্রশান্ত ও চিরন্তন। – কাজী নজরুল ইসলাম
- ভালোবাসার কোন অর্থ বা পরিমাণ নেই। – কাজী নজরুল ইসলাম
- ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা না পেলে তার জীবন দুঃখের ও জড়তার। – কাজী নজরুল ইসলাম
- ভালোবাসাকে যে জীবনে অপমান করে সে জীবনে আর ভালোবাসা পায় না। – কাজী নজরুল ইসলাম
কাজী নজরুল ইসলাম এর স্ট্যাটাস
কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বিদ্রোহী কবি, সাম্য কবি। তিনি যে কোন খারাপ কাজে বিদ্রোহ করতেন। পশুর মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা আমাদের লাভ কি যদি আমাদের গৌরব করার মত কিছুই না থাকে। কারণ আমরা যদি গৌরবময় কাজ না করি তাহলে আমরা কি নিয়ে গৌরব করব। একজন মানুষের কপালে যদি সুখ না থাকে কপাল কেট পাথরের মতো ঠুকে লাভ কি। মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত। আমি বিদ্রোহী ভৃগু ভগবান বুকে এঁকে দেই পদ চিহ্ন। মৃত্যুর যন্ত্রনা প্রেম বিরহের যন্ত্রনা যে কত কঠিন সেটা একমাত্র যে পেয়েছে সেই জানে। তাইতো কাজী নজরুল ইসলাম বিরহের দিকে না গিয়ে বিদ্রোহ করে যেতেন। তা আর কিছু বিখ্যাত স্ট্যাটাস আজকে আমরা জানাবো।
- আমি বেদুঈন আমি চেঙ্গিস আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ। – কাজী নজরুল ইসলাম
- বল বীর বল উন্নত মম শির। শির নেহারি আমারি নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রীর। – কাজী নজরুল ইসলাম
- কারার ঐ লৌহকপাট ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট, রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী। – কাজী নজরুল ইসলাম
- ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা দিবে কোন বলিদান। – কাজী নজরুল ইসলাম
নারী নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের বাণী
আমাদের প্রিয় সাম্যের কবি এবং বিদ্রোহের কবি নারীদের নিয়ে অনেক কথা বলে গেছেন। বিশ্বে যা কিছু রয়েছে তা হলো অর্ধেক নারী অর্ধেক নারী। কারণ প্রেম ও ভালোবাসার সাথে নারীর রয়েছে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। প্রেম ও ভালোবাসার কবি নারী নিয়ে লিখবেন না তা হয় না। নারী এবং নারীদের সম্মান নিয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বেশ কিছু কবিতা লিখেছেন দিয়ে গিয়েছেন অসংখ্য যুগান্তকারী বাণী। নারীদের নিয়ে লেখার কারণে তখনকার সমাজের অনেক নামি-দামি কবি-সাহিত্যিক তাকে নারী-ঘেঁষা কবি বলে উল্লেখ করেছেন। কবি তাও সানন্দে গ্রহণ করেছেন। নারীদের নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের বাণী সমূহের কিছু অংশকে আজকে আমরা তুলে ধরব।
- নর ভাবে আমি বড় নারী ঘেষা, নারী ভাবে নারী বিদ্বেষী। – কাজী নজরুল ইসলাম
- সর্বসহা কন্যা মোর, সর্বহারা মাতা। শুন্য নাহি রহে কভু মাতা ও বিধাতা। – কাজী নজরুল ইসলাম
- কোন কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারী প্রেরণা দিয়াছে শক্তি দিয়াছে বিজয়-লক্ষ্ণী নারী। – কাজী নজরুল ইসলাম
- ভগবান তুমি চাহিতে পারো কি এই দুটি নাড়ির পানে। জানিনা তোমায় বাঁচাবে কে যদি ওরা অভিশাপ হানে। – কাজী নজরুল ইসলাম
শেষ কথা
তাই আমরা বলতে পারি তিনি ছিলেন ভালোবাসার কবি, বিদ্রোহী কবি নারী নিয়ে অনেক কথায় তিনি আরো বলেছেন। নারী নিয়ে অনেক কবিতা রয়েছে তার। কিন্তু যখন তিন নারী নিয়ে কবিতা লিখতেন সমাজের অনেক বিখ্যাত বড় বড় কবি তখন তাকে নারী-ঘেঁষা বলে আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু তাও কাজী নজরুল ইসলাম সানন্দে এইসব কিছু গ্রহণ করে নিতেন। আবার কোন দিকে কোন খারাপ কাজ হলে তিনি সেটার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতেন। কবি আরেকটা কথা বলে গিয়েছেন কপালে যদি কারো সুখ না থাকে তাহলে পাথর ঢুকেও লাভ নেই কোন। আশা করি আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে কাজী নজরুল ইসলাম আমার কিছু কথা এবং তার রেখে যাওয়া কিছু উক্তি, বানি ও স্ট্যাটাস জানতে পেরেছেন।